* চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ কয়েক বছর আগেও ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় যেতে বাংলাদেশীদের কোনো ভিসার প্রয়োজন হতো না।
* সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াও বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা অনুমোদনে নানা শর্ত ও জটিলতা বাড়িয়েছে।
বিশ্বে ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশীদের গন্তব্য। কারণ অনেক দেশই এখন বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভিয়েতনাম বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ কয়েক বছর আগেও ভিয়েতনাম কিংবা ইন্দোনেশিয়ায় যেতে বাংলাদেশীদের কোনো ভিসার প্রয়োজন হতো না। অন অ্যারাইভাল ভিসা বা ইমিগ্রেশন অ্যাপ্রুভাল নিয়েই দেশ দুটি ভ্রমণ করা যেত। তাছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াও বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা অনুমোদনে নানা শর্ত ও জটিলতা বাড়িয়েছে। ওই তিন দেশের অনেক ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। যারা বেশ কয়েকবার ওসব দেশ ভ্রমণ করেছেন তাদের ভিসা আবেদনও অনুমোদন হচ্ছে না। বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যুর জন্য নতুন অনেক শর্তও জুড়ে দেয়া হচ্ছে। অভিবাসন ও পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশীদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) গত বছরের জুলাইয়ে ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেয়। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও দেশটি অভিবাসী শ্রমিকের পাশাপাশি পর্যটন ভিসাও বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও আমিরাত সমপ্রতি বাংলাদেশীদের জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। তবে তার পরিমাণ খুবই নগণ্য হবে। তাছাড়া ভারত ছিলো এ দেশের মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত বাংলাদেশীদের ভ্রমণের সবচেয়ে বড় গন্তব্য। অনেক বাংলাদেশী স্থলপথে প্রতিবেশী দেশ ভারত ঘুরতে গিয়ে নেপাল ও ভুটান ভ্রমণেও যেতেন। দক্ষিণ এশিয়ার ছোট ওই দুটি দেশে ভ্রমণ করতে বাংলাদেশীদের ভিসার প্রয়োজন হয় না। অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়েই বাংলাদেশীদের নেপাল ও ভুটানে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে ভারতের পক্ষ থেকে ভিসা ইস্যু প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। জরুরি চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনে বৈধ পথে বাংলাদেশীদের ভারত যাত্রা বন্ধ রয়েছে। ভারতের ভিসা না পাওয়ায় বাংলাদেশীদের নেপাল ও ভুটান ভ্রমণও সীমিত হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশীদের জন্য প্রতিবেশী ভারত ভিসা কড়াকড়ি করলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে পাকিস্তান ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করে । ঢাকা-করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশী পর্যটকদের অনেকে পাকিস্তানে যেতে আগ্রহীও। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের সামপ্রতিক যুদ্ধ ও পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বাংলাদেশীদের ওই আগ্রহেও ভাটা পড়ছে। বর্তমানে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা কমছে। আন্তর্জাতিক সূচকে (হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স) বাংলাদেশী পাসপোর্টের অবস্থান এখন উত্তর কোরিয়া কিংবা লিবিয়ার পর্যায়ে। যে কারণে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসার শর্ত ও জটিলতা বাড়ছে। গত কয়েক বছর পর্যটক হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশী আর ফেরেননি। অবৈধভাবে তারা গন্তব্যের দেশে থেকে গেছেন কিংবা চোরাই পথে অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছেন। ওসব কারণে এ অঞ্চলের দেশগুলোয় বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা ইস্যু বন্ধ হচ্ছে কিংবা জটিলতা বাড়ছে।
সূত্র আরো জানায়, বিশ্বের ১৯৯টি দেশের পাসপোর্ট ও ২২৭টি ভ্রমণ গন্তব্য নিয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সূচক প্রতি বছর যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত সর্বশেষ সূচক অনুযায়ী বিশ্বে বাংলাদেশী পাসপোর্টের অবস্থান ছিল ৯৫তম। বাংলাদেশের ওপরে ৯৪তম স্থানে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। যে দেশটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মুখে রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত লিবিয়া যৌথভাবে একই অবস্থানে আছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ট্যাক্স ও অভিবাসন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নোমাড ক্যাপিটালিস্টের বিশ্লেষণে বৈশ্বিক পাসপোর্ট শক্তিমত্তার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮১তম। ভিসামুক্ত ভ্রমণ, কর ব্যবস্থা, বৈশ্বিক ধারণা, দ্বৈত নাগরিকত্বের সক্ষমতা এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা ওই পাঁচ মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা নোমাডের সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৩৮। এ সূচকে কোনো দেশের স্কোর ৫০-এর নিচে থাকলে ওই দেশের নাগরিক বিশ্বের অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ করলে সেখানকার মানুষ তাদের ভালোভাবে গ্রহণ করে না।
এদিকে দেশের ট্রাভেল প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের মতে, পর্যটক হিসেবে বাংলাদেশী মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা আগে যেতেন ভারত, নেপাল কিংবা ভুটান। পাসপোর্টে এক-দুটি দেশের সিল পড়ার পর তারা থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোর ভিসা আবেদন করতেন। কিন্তু ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় এখন ওই পর্যটকরা সরাসরি থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়ার ভিসা আবেদন করছেন। আবেদনকারীদের চাপ বেশি হওয়ায় থাইল্যান্ড পর্যাপ্ত ভিসা দিতে পারছে না। বরং তারা যাচাই-বাছাই করে কিছু ভিসা ইস্যু করছে। আর নতুন পাসপোর্ট হলে সিঙ্গাপুরের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। আর গত কয়েক বছরে ভিয়েতনামে যাওয়া বাংলাদেশীদের ৬০-৭০ শতাংশ দেশে না ফেরার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বেশির ভাগ ভিয়েতনাম থেকে অবৈধ পথে অন্য কোনো দেশে চলে গেছে। যে কারণে ভিয়েতনামের মতো দেশও বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এখন বাংলাদেশীদের জন্য চীনের ভিসা খুবই সহজ। আর অনঅ্যারাইভাল হওয়ার কারণে খুব সহজে মালদ্বীপ ও শ্রীলংকা যাওয়া যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশীদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে ভ্রমণ এখন বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির জানান, দেশে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ না বাড়লে বাংলাদেশীদের অবৈধ বিদেশ যাত্রা থামবে না। দেশে তরুণদের মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হচ্ছে না। দেশে কর্মসংস্থান না হলে তারা যেকোনো উপায়ে বিদেশ পাড়ি দিতে চাইবে, এটিই স্বাভাবিক। পর্যটক হিসেবে গিয়ে কাজ করা কিংবা অবৈধ পথে বিদেশ যাত্রার কারণেই বাংলাদেশীদের ভিসা ইস্যু নিয়ে জটিলতা ও নিষেধাজ্ঞা বাড়ছে। আর বিদেশে বাংলাদেশী পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতাও কমছে। প্রতি বছর যে পরিমাণ মানুষ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে, দেশে তাদের সবার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন। সেক্ষেত্রে সরকারের দেখা দরকার যে বিদেশগামী অভিবাসী শ্রমিকরা যেন শিক্ষিত ও দক্ষ হয়। আর ভুয়া ভিসা কিংবা ভুয়া তথ্য দিয়ে কেউ যেন বিদেশ যেতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

একের পর এক বন্ধ হচ্ছে বাংলাদেশীদের ভিসা
- আপলোড সময় : ৩১-০৫-২০২৫ ০৬:২৩:২০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-০৫-২০২৫ ০৬:২৩:২০ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ